1. info@probashebangladesh.com : বার্তা বিভাগ : বার্তা বিভাগ
  2. shiraj466@yahoo.com : Hoque : Hoque
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ১০:৫০ অপরাহ্ন

কার্পেটের তলায় ময়লা রেখে ঘর পরিষ্কার দেখাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক?

Reporter Name
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪
  • ৭১ বার পঠিত

প্রতিনিয়ত শুনতে হয় সাংবাদিকতা আর নেই দেশে। কারণ মানুষ যা চায় সব দিতে পারছে না মিডিয়া। সাংবাদিকরা খারাপ, কিন্তু কে যে ভালো সেটা আমরা বুঝতে পারছি না। তবে এত খারাপের মধ্যেও বেসিক ব্যাংক লুট হওয়া, ফারমার্স ব্যাংকের লোপাট হওয়া, হল-মার্ক কেলেঙ্কারি, ইসলামী ব্যাংকের ত্রাহি অবস্থা- এসব খবর মিডিয়াই প্রকাশ করেছে। সাংবাদিকরা যদি সমাজের আনাচে-কানাচে অপকর্মের বিভিন্ন ঘটনা সংবাদমাধ্যমে তুলে না ধরতেন, তা হলে অপরাধীদের বাড়বাড়ন্ত মাত্রাছাড়া হতো। মিডিয়াকে বাদ দিয়ে আজ কোনো কিছু ভাবা যায় না। অপরাধীরা মিডিয়াকে এড়িয়ে চলে, গালাগাল দেয়, সুযোগ পেলে সাংবাদিকদের মারধর করে, ক্যামেরা, মোবাইল ভেঙে দেয়।

তবে কি এ রকম একটা ভূমিকায় নেমেছে বাংলাদেশ ব্যাংক? কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এখন থেকে সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো তারা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।’ এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন আইএমএফের একটি টিম ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করছে। অর্থাৎ আমলাপ্রধান এই প্রতিষ্ঠানটি একটি আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেন সাংবাদিকরা কোনো তথ্য না পায়, যেন কার্পেটের তলায় ময়লা রেখে দিলেই ঘর পরিষ্কার। প্রথম প্রতিক্রিয়ায় অর্থনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ইআরএফ ঠিক কথাই বলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর যোগদানের পর থেকে দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন সেগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখছে না, উল্টো দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এ ছাড়া তিনি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত ডলার বাজারের অনিয়ম রোধে ব্যর্থ হয়েছেন। সেসব বিষয় গণমাধ্যমে চলে আসায় তিনি সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করেছেন।

সংবাদমাধ্যমের অন্যতম কাজ দুর্নীতির খবর প্রকাশ। তা করতে গিয়ে সাংবাদিকরা আক্রান্ত হন, তাদের ক্যামেরা ভাঙা হয়, এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয় না। এতদিন এই কাজটা করত পুলিশ, রাজনৈতিক গু-া, ধর্মীয় রাজনীতির কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক মনে হচ্ছে সেই ভূমিকায় নেমেছে।

প্রশ্ন উঠছে, কেন বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের ভয় পায়- তার উত্তর এখানেই। বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে অসাধারণ সব অনিয়ম আর দুর্নীতি চলছে, সুশাসনের অভাবে যে ব্যাংকিং খাত একদম তলানিতে চলে গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল সিদ্ধান্তে আজ বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে যে অচলাবস্থা, এসব খবর তারা চেপে রাখতে চায়।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনাকারী আমলারা এক অ™ু¢ত মানসিকতা লালন করেন। কোনো কাজের বা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেই সাংবাদিকদের দেশবিরোধী বলে দাগিয়ে দেওয়া, মানহানি, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত করা ইত্যাদি অভিযোগ আনার প্রবণতা তাদের রক্তের মধ্যে। গভর্নরের মনে রাখা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি জনগণের প্রতিষ্ঠান এবং এটি কোনো সেনানিবাস নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চায় তাদের বেতনভুক মুখপাত্রের মাধ্যমে খবর সংগ্রহ করবেন সাংবাদিকরা। তা হলে আর ঘটা করে ব্রিফিংয়ের দরকার কী? প্রেস রিলিজ দিয়েই তো সেটা করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অনুমতি-সংস্কৃতি প্রকারান্তরে সাংবাদিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন করে অথচ এই আমলেই ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসক, ইউএনওরা তথ্য না দেওয়ার সংস্কৃতি লালন করছে। এখন সেখানে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক আসলে সাংবাদিকতাকে ভয় পায়, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে আরও বেশি ভয় পায়।

সরকারি অফিস চলে জনগণের করের টাকায়। সরকারি কর্মকর্তারা বেতন পান মানুষের করের পয়সায়। জনগণের করের পয়সায় সরকারি কর্মচারীরা কী করছেন, জনগণকে কী সেবা দিচ্ছেন, কোন তরিকায় দিচ্ছেন, কী কী অনিয়ম করছেন- সেগুলো মানুষকে জানানোর দায়িত্ব সাংবাদিকদের। তাই সরকারি অফিসে, সেটি হোক জেলা প্রশাসকের দপ্তর, হোক সরকারি হাসপাতাল কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক- সেখানে প্রবেশে সাংবাদিককে বিশেষ অনুমতি কিংবা পাস নিতে হবে কেন?

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সাংবাদিক ভীতি তৈরি হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে। এবং সেটার কারণ এখন আর্থিক খাতের পরিস্থিতি একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকই বলছে, ব্যাংকিং খাতের ক্ষত অতি গভীর। দীর্ঘদিন অনিয়ম, লুটপাট আর ঋণখেলাপির সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে এখন সরকারের কপালে ভাঁজ। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খল অবস্থা এখন এমন জায়গায় গেছে যে, কোনো কূলকিনারা করতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকার। খেলাপি ঋণ কমানো ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ শাসনামলে খেলাপি ঋণ কয়েকগুণ বেড়েছে, বেড়েছে অনিয়ম। ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শাসনব্যবস্থা নিয়েও গলদ প্রচ-। নিয়ম অনুযায়ী সারা বিশ্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অভিভাবক। বাংলাদেশেও কাগজপত্রে তাই। কিন্তু এ দেশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আছে এক ব্যাংক ও আর্থিক খাত বিভাগ। যার প্রধান একজন সচিব। পুরো আর্থিক খাতের ওপর সরকারের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব স্থায়ী করে রেখেছে এই বিভাগ। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেয়ে এই বিভাগের কাছেই বেশি ধরনা দেয় ব্যাংক মালিকরা।

কোনোভাবেই ব্যাংক ও আর্থিক খাত সবল করতে পারছে না। গভর্নর ও তার সহযোগীদের চেষ্টায় কী কী ভুল থাকে সেগুলো প্রকাশ করে ফেলে গণমাধ্যম। সেই ক্ষোভ আর হতাশা থেকেই এখন তথ্যের দরজা বন্ধ করতে তৎপর হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
All rights reserved © 2023
Design By Raytahost